প্রশ্ন: গত রমজানে একদিন ওজু করছিলাম। কুলি করার সময় হঠাৎ গলার ভেতরে পানি চলে যায়। অনিচ্ছাকৃত এমনটি ঘটেছে বিধায় সারাদিন রোজা অবস্থাতেই ছিলাম। আমার ওই রোজা কি শুদ্ধ হয়েছে? যদি শুদ্ধ না হয়ে থাকে তাহলে এখন আমার জন্য করণীয় কী?
উত্তর: রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবেও গলার ভেতরে পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যায়। তাই আপনার ওই দিনের রোজা শুদ্ধ হয়নি। ওই রোজার কাযা করে নিতে হবে। তবে রোজাটি আদায় না হলেও বাকি দিন পানাহার থেকে বিরত থাকা নিয়ম সম্মতই হয়েছে। এমন ক্ষেত্রে রমজানের সম্মানে পানাহার থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায়:
- রোজা অবস্থায় অসুস্থতার কারণে ইনহেলার (Inhelar) ব্যবহারের দ্বারা রোজা ভেঙে যায় (শামি ৩/৩৬৬)।
- রোজা অবস্থায় ইচ্ছাকৃত বমি করা বা মুখে বমি চলে আসার পর তা পরিমাণে অল্প হলেও ইচ্ছাকৃত গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যাবে (মুসান্নাফে আব্দুর রাজজাক ৪/১৯৭)।
- যদি নাশিকা দিয়ে রক্ত বের হওয়ার পর মুখে চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে (তাতারখানিয়া ৩/৩৮৩)। রোজাদার যদি মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে পড়ে আর এমতাবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে যায় ও পানের কিছু অংশ পেটে চলে যায়, তাহলে তার রোজা হবে না। পরে কাজা করতে হবে। কাফফারা দেওয়া লাগবে না (শামি ৩/৩৭৪)।
- কুলি করার সময় যদি অনিচ্ছাকৃত পানি গলা দিয়ে পেটে চলে যায় তাহলে রোজা কাজা করতে হবে। কাফফারা ওয়াজিব হবে না। আর যদি রোজার কথা স্মরণই না থাকে, পানি মুখে নিয়ে খেয়ে ফেলে তাহলে রোজা ভাঙবে না (তাতারখানিয়া ৩/৩৭৮)।
- নাক অথবা কানের মধ্যে তেল দেওয়ার দ্বারা রোজা ভেঙে যাবে। তবে কাফফারা ওয়াজিব হবে না (হেদায়া ১/২২০)।
- যদি কোনো ব্যক্তি কারও ধমকের কারণে অথবা ভুল করে যেমন রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করে অতঃপর রোজা ভেঙে গেছে মনে করে ইচ্ছা করে পানাহার করল, তাহলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে এবং কাজা করা জরুরি (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৬/১৪৯)।
- পাথরের কণা, মাটি, ঘাস, কাগজ ইত্যাদি মোটকথা যা সাধারণ আহারযোগ্য নয় বা কোনো উপকারে আসে না তা খেলেও রোজা ভেঙে যাবে এবং কাজা করতে হবে (বাযযাযিয়া, ৪/৯৯)।
- দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে যদি থুতুর সঙ্গে ভেতরে চলে যায়। আর রক্তের পরিমাণ যদি থুতুর সমান বা বেশি হয় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে (বোখারি ১/২৬০)। বিড়ি সিগারেট, হুঁকা পান করলে রোজা ভেঙে যাবে এবং কাজা করা জরুরি (শামি ৩/৩৬৬)।
কঠিন অসুস্থতার ফলে যদি কোনো মানুষ রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে শুধু কাজা করতে হবে। কাফফারা দেওয়া লাগবে না (তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/১৮৯)।
সূত্র: মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, বর্ণনা ৯৫৮০; কিতাবুল আছল ২/১৫০ বাদায়েউস সানায়ে ২/২৩৮; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৩/৪২৮; ফাতহুল কাদীর ২/২৮২