ইসলামী জীবন :

পবিত্র কোরান ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী ওযুর নিয়ম

ওযুর নিয়ম সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরানের সুরা আল-মায়েদা অধ্যায় ৫ আয়াত ৬ এ বলেন:

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡهَكُمۡ وَ اَیۡدِیَكُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِكُمۡ وَ اَرۡجُلَكُمۡ اِلَی الۡكَعۡبَیۡنِ ؕ وَ اِنۡ كُنۡتُمۡ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوۡا ؕ وَ اِنۡ كُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡكُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡهِكُمۡ وَ اَیۡدِیۡكُمۡ مِّنۡهُ ؕ مَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡكُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰكِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَهِّرَكُمۡ وَ لِیُتِمَّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ
অর্থঃ হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশে দন্ডায়মান হও তখন (সালাতের পূর্বে) তোমাদের মুখমণ্ডল ধৌত কর এবং হাতগুলিকে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসাহ কর এবং পা’গুলিকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেল। যদি তোমরা অপবিত্র হও তাহলে গোসল করে সমস্ত শরীর পবিত্র করে নাও। কিন্তু যদি রোগগ্রস্ত হও কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেহ পায়খানা হতে ফিরে আস কিংবা তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ কর (স্ত্রী-সহবাস কর), অতঃপর পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও, তখন তোমরা তা দ্বারা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসাহ কর, আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা আনয়ন করতে চাননা, বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে ও তোমাদের উপর স্বীয় নি‘আমাত পূর্ণ করতে চান, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
O you who have believed, when you rise to [perform] prayer, wash your faces and your forearms to the elbows and wipe over your heads and wash your feet to the ankles. And if you are in a state of janabah, then purify yourselves. But if you are ill or on a journey or one of you comes from the place of relieving himself or you have contacted women and do not find water, then seek clean earth and wipe over your faces and hands with it. Allah does not intend to make difficulty for you, but He intends to purify you and complete His favor upon you that you may be grateful.

ওযু করা বাধ্যতামূলক যা কোরানের উপরোক্ত আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে এবং কোরআনের এই আয়াতের ভিত্তিতে ওযুর চারটি ফরজ রয়েছে:

  • মুখ ধোয়া
  • হাত ধোয়া (কনুইসহ)
  • মাথা মাসহ করা (কমপক্ষে একভাগে হাত বুলানো)
  • পা ধোয়া (টাখনু পর্যন্ত)

যদিও কোরআনে ওযুর ফরজ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে, তবে হাদিসের মাধ্যমে আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃ–এর সুন্নত অনুযায়ী সম্পূর্ণ পদ্ধতিটা জানতে পারি। ওযুর সুন্নত পদ্ধতি:

  • নিয়ত করা – মনে মনে ইবাদতের উদ্দেশ্যে ওযুর নিয়ত করা।
  • বিসমিল্লাহ বলা – “বিসমিল্লাহ” বলে শুরু করা।
  • হাত ধোয়া – কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধোয়া।
  • কুলি করা – মুখে পানি দিয়ে কুলি করা (তিনবার)।
  • নাকে পানি দেওয়া ও পরিষ্কার করা – নাকে পানি টেনে নিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করা (তিনবার)।
  • মুখ ধোয়া – পুরো মুখ ভালোভাবে ধোয়া (তিনবার)।
  • হাত ধোয়া – হাত কনুইসহ ধোয়া (তিনবার)।
  • মাথা মাসহ করা – ভেজা হাত দিয়ে পুরো মাথার উপর মাসহ করা (একবার)।
  • কান মাসহ করা – হাত ভেজা থাকলে কানের ভেতর ও বাইরের অংশ মাসহ করা (একবার)।
  • পা ধোয়া – টাখনুসহ পা ধোয়া (তিনবার)।
  • দোয়া পড়া – ওযু শেষে এই দোয়াটি পড়া:

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বান্দা ও রাসূল।” (সহীহ মুসলিম, ২৩৪)

এছাড়া, ওযুর পর দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ারও ফজিলত রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করে, তার গুনাহগুলো তার শরীর থেকে বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নিচ থেকেও।”
(সহীহ মুসলিম, ২৪৫)

এছাড়াও, ওযু সহিহ না হলে নামাজ গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই ওযুর প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।

সংক্ষেপে ওযুর ধাপ

✅ নিয়ত করা
✅ বিসমিল্লাহ বলা
✅ হাত ধোয়া
✅ কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া
✅ মুখ ধোয়া
✅ হাত ধোয়া (কনুইসহ)
✅ মাথা মাসহ করা
✅ কান মাসহ করা
✅ পা ধোয়া (টাখনুসহ)
✅ ওযুর দোয়া পড়া

এভাবেই কোরআন ও হাদিসের আলোকে ওযুর পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি সম্পন্ন হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *