`লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ কালিমাটি ইসলামের মূল ভিত্তি, যার অর্থ `আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।’ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ – এই তাওহিদের কালিমা চিরন্তন সত্য, যা সমস্ত নবীদের যুগে প্রচলিত ছিল। তবে এটি শব্দগতভাবে কেমন ছিল, তা নির্দিষ্টভাবে জানা যায় না। হজরত আদম (আ:) ছিলেন পৃথিবীর প্রথম নবী এবং মানবজাতির পিতা। আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করে একত্ববাদ (তাওহিদ) শেখান। ইসলামের দৃষ্টিতে সমস্ত নবীই এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিয়েছেন। পবিত্র কোরানের সূরা আন-নাহাল অধ্যায় ১৬ আয়াত ৩৬ এ বর্ণিত হয়েছে:
وَلَقَدۡ بَعَثۡنَا فِیۡ کُلِّ اُمَّۃٍ رَّسُوۡلًا اَنِ اعۡبُدُوا اللّٰہَ وَاجۡتَنِبُوا الطَّاغُوۡتَ ۚ فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ ہَدَی اللّٰہُ وَمِنۡہُمۡ مَّنۡ حَقَّتۡ عَلَیۡہِ الضَّلٰلَۃُ ؕ فَسِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَانۡظُرُوۡا کَیۡفَ کَانَ عَاقِبَۃُ الۡمُکَذِّبِیۡنَ
অর্থঃ আল্লাহর ইবাদাত করার ও তাগুতকে বর্জন করার নির্দেশ দেয়ার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি; অতঃপর তাদের কতককে আল্লাহ সৎ পথে পরিচালিত করেন এবং তাদের কতকের উপর পথভ্রান্তি সাব্যস্ত হয়েছিল। সুতরাং পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, যারা সত্যকে মিথ্যা বলেছে তাদের পরিনাম কি হয়েছে!
And We certainly sent into every nation a messenger, [saying], “Worship Allah and avoid Taghut.” And among them were those whom Allah guided, and among them were those upon whom error was [deservedly] decreed. So proceed through the earth and observe how was the end of the deniers.
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, `আমি আদম (আ.) থেকে শুরু করে সমস্ত নবীদের মধ্য থেকে আল্লাহর নিকট এই সাক্ষ্য গ্রহণ করিয়েছি যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ছাড়া আর কোনো সত্য উপাস্য নেই।’ (মুসনাদে আহমাদ, ২৮৭৪)
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, আদম (আ.)-এর সময় থেকেই `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ছিল এবং তিনি তাওহিদের (একত্ববাদ) বাণী প্রচার করেছেন। যদিও তখন কোরান নাজিল হয়নি এবং আরবি ভাষা ঐভাবে গঠিত হয়নি তাই ঠিক আরবি ভাষার মতো এই বাক্যাংশে `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ছিল কিনা, তা জানা যায় না। তবে অর্থগতভাবে— “শুধু আল্লাহ ই উপাস্য, তাঁর কোনো শরিক নেই”—এই বিশ্বাস আদম (আ.)-সহ সব নবীদের মূল শিক্ষা ছিল।
অন্যদিকে আদম আ: উপাধি ছিল `আদম সাফিউল্লাহ’। অর্থাৎ আদম (আলাইহিস সালাম) ছিলেন আল্লাহর মনোনীত (সাফিউল্লাহ) নবী। যদি আমরা বর্তমানে পুরো বিষয়টি একসাথে আরবি ভাষায় বলতে চাই তাহলে বলতে হবে, `লা ইলাহা ইল্লাহ, আদম সাফিউল্লাহ’।
এভাবে আদম আঃ পর থেকে সব নবীদের যুগেও মূল তাওহিদী বার্তা ছিল “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্য উপাস্য নেই” এবং নবীদের ছিল বিশেষ উপাধী। যেমন:
- আদম (আ.) – سَفِي الله (সাফিউল্লাহ) – আল্লাহর মনোনীত
- নূহ (আ.) – نَجِيُّ الله (নাজিয়ুল্লাহ) – আল্লাহর নিকটবর্তী
- ইব্রাহিম (আ.) – خَلِيلُ الله (খলিলুল্লাহ) – আল্লাহর বন্ধু
- মূসা (আ.) – كَلِيمُ الله (কালিমুল্লাহ) – আল্লাহর সঙ্গে কথা বলা নবী
- ঈসা (আ.) – رُوحُ الله (রূহুল্লাহ) – আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ আত্মা
- মুহাম্মদ (সা.) – رَّسُوْ لُ الله (হাবিবুল্লাহ) – আল্লাহর মনোনীত রাসূল
তবে আখেরী নবী হজরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্য মুহাম্মদ (সা.) – حَبِيبُ الله (হাবিবুল্লাহ) – আল্লাহর প্রিয়তম অর্থাৎ আল্লাহ’র হাবিব বিশেষণও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই উপাধিগুলো নবীদের মর্যাদাকে প্রকাশ করে এবং আল্লাহর সাথে তাঁদের বিশেষ সম্পর্ক বোঝায়।