ধর্ষণ ও ব্যভিচার প্রতিরোধে কোরআন ও সহীহ হাদীসের নির্দেশনা

ইসলামে ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ এবং এটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোরআন ও সহীহ হাদিসে ধর্ষণ প্রতিরোধ এবং দোষীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান দেওয়া হয়েছে। নারী ও পুরুষের পবিত্রতা বজায় রাখা ও পর্দার বিধান বর্ণনা করে পবিত্র কোরআনের সূরা আন-নূর অধ্যায় ২৪ আয়াত ৩০ এ আল্লাহ বলেনঃ

قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِہِمۡ وَیَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَہُمۡ ؕ ذٰلِکَ اَزۡکٰی لَہُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ
অর্থঃ মুমিন পুরুষদের বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য শুদ্ধতর। তারা যা-কিছু করে আল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত।
Tell the believing men to reduce [some] of their vision and guard their private parts. That is purer for them. Indeed, Allah is Acquainted with what they do.

একই অধ্যায় সূরা আন-নূর অধ্যায় ২৪ আয়াত ৩০ এ আল্লাহ আরো বলেনঃ

وَقُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِہِنَّ وَیَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَہُنَّ وَلَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا مَا ظَہَرَ مِنۡہَا وَلۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِہِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِہِنَّ ۪ وَلَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا لِبُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اٰبَآئِہِنَّ اَوۡ اٰبَآءِ بُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اَبۡنَآئِہِنَّ اَوۡ اَبۡنَآءِ بُعُوۡلَتِہِنَّ اَوۡ اِخۡوَانِہِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اِخۡوَانِہِنَّ اَوۡ بَنِیۡۤ اَخَوٰتِہِنَّ اَوۡ نِسَآئِہِنَّ اَوۡ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُہُنَّ اَوِ التّٰبِعِیۡنَ غَیۡرِ اُولِی الۡاِرۡبَۃِ مِنَ الرِّجَالِ اَوِ الطِّفۡلِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یَظۡہَرُوۡا عَلٰی عَوۡرٰتِ النِّسَآءِ ۪ وَلَا یَضۡرِبۡنَ بِاَرۡجُلِہِنَّ لِیُعۡلَمَ مَا یُخۡفِیۡنَ مِنۡ زِیۡنَتِہِنَّ ؕ وَتُوۡبُوۡۤا اِلَی اللّٰہِ جَمِیۡعًا اَیُّہَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
অর্থঃ আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেনো তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেনো তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদেও গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেনো নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।
And tell the believing women to reduce [some] of their vision and guard their private parts and not expose their adornment except that which [necessarily] appears thereof and to wrap [a portion of] their headcovers over their chests and not expose their adornment except to their husbands, their fathers, their husbands’ fathers, their sons, their husbands’ sons, their brothers, their brothers’ sons, their sisters’ sons, their women, that which their right hands possess, or those male attendants having no physical desire, or children who are not yet aware of the private aspects of women. And let them not stamp their feet to make known what they conceal of their adornment. And turn to Allah in repentance, all of you, O believers, that you might succeed.

এই আয়াতগুলোতে নারীদের পর্দা ও শালীন পোশাক পরিধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং পুরুষদেরও সংযত দৃষ্টি রাখার আদেশ দেওয়া হয়েছে, যা ধর্ষণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধর্ষণের ব্যভিচারের কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনের সূরা আন-নূর অধ্যায় ২৪ আয়াত ২ বর্ণীত হয়েছেঃ

اَلزَّانِیَۃُ وَالزَّانِیۡ فَاجۡلِدُوۡا کُلَّ وَاحِدٍ مِّنۡہُمَا مِائَۃَ جَلۡدَۃٍ ۪ وَّلَا تَاۡخُذۡکُمۡ بِہِمَا رَاۡفَۃٌ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰہِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ ۚ وَلۡیَشۡہَدۡ عَذَابَہُمَا طَآئِفَۃٌ مِّنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
অর্থঃ ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী তাদের প্রত্যেককে একশত করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর আইন কার্যকর করার ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়ামায়া তোমাদেরকে যেনো প্রভাবিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাত দিনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে থাকো। একদল মু’মিন যেনো তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।
The [unmarried] woman or [unmarried] man found guilty of sexual intercourse – lash each one of them with a hundred lashes, and do not be taken by pity for them in the religion of Allah, if you should believe in Allah and the Last Day. And let a group of the believers witness their punishment.

ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি অত্যন্ত কঠোর, যাতে সমাজে এমন অপরাধ প্রতিরোধ হয়। ধর্ষণ একটি বিশেষ ব্যভিচার, যা জোরপূর্বক করা হয়, এবং ইসলামিক শরীয়তে এর শাস্তি ব্যভিচারের চেয়েও কঠোর হতে পারে। সহীহ হাদিসে বর্ণীত হয়েছে, ‘একবার এক ধর্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে, নবী মুহাম্মদ সাঃ তাকে পাথর মেরে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন’। আবু দাউদ: ৪৩৭৯, তিরমিজি: ১৪৫৪। এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, ধর্ষণের শাস্তি কঠোর, যাতে এটি সমাজে রোধ করা যায়।

ইসলামে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রæত ও কঠোর বিচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে অপরাধীরা শাস্তি থেকে রেহাই না পায় এবং অন্যরা শিক্ষা গ্রহণ করে। সহীহ হাদিসে বর্ণীত হয়েছে, মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষ তখনই বিপথগামী হয়, যখন দুর্বলদের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করা হয় না, অথচ ক্ষমতাশালীদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’ সহীহ বুখারি: ৬৭৮৮, সহীহ মুসলিম: ৪৩৯০। অর্থাৎ, যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা না হয়, তবে অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। তাই ইসলাম শাস্তির ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করতে নিষেধ করেছে। ইসলামে ধর্ষণ প্রতিরোধে কার্যকর সামাজিক নির্দেশনা রয়েছে:

বৈধ সম্পর্ককে সহজ করাঃ ইসলামে বিয়ে সহজ করা হয়েছে, যাতে হারাম সম্পর্কে মানুষ না জড়ায়।
বেপর্দা মেলামেশা পরিহার করাঃ অশ্লীলতা ও অবৈধ সম্পর্কের দিকে ধাবিত হওয়া বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
সতর্কতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণঃ ইসলামে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে, যেমন রাতের বেলায় একাকী বের না হওয়া ইত্যাদি।

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, ‘তোমরা ফিতনার (অশ্লীলতা ও ব্যভিচারের) নিকটবর্তী হয়ো না।’ সহীহ মুসলিম: ৬৪৩। ইসলাম ধর্ষণকে একটি মারাত্মক অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এবং এটি প্রতিরোধের জন্য কঠোর আইন ও সামাজিক বিধান দিয়েছে। কোরআন ও হাদিসে শালীনতা, পর্দা, সংযম, ন্যায়বিচার ও কঠোর শাস্তির মাধ্যমে ধর্ষণ প্রতিরোধের পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা রয়েছে। যদি সমাজ ইসলামের এই নির্দেশনাগুলো মেনে চলে, তবে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব। পবিত্র কোরআনের সূরা আল-বাকারা অধ্যায় ২ আয়াত ১৯৬ এ আল্লাহ হূঁশিয়ারী দিয়ে বলেনঃ

وَاتَّقُوا اللّٰہَ وَاعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ
অর্থঃ আল্লাহকে ভয় করো ও জেনে রেখ যে, আল্লাহ কঠিন শাস্তি দাতা।
And fear Allah and know that Allah is severe in penalty.

এছাড়াও পবিত্র কোরআনের সূরা আল-মায়েদা অধ্যায় ৫ আয়াত ৩৩ এ বর্ণীত হয়েছেঃ

اِنَّمَا جَزٰٓؤُا الَّذِیۡنَ یُحَارِبُوۡنَ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ وَیَسۡعَوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَسَادًا اَنۡ یُّقَتَّلُوۡۤا اَوۡ یُصَلَّبُوۡۤا اَوۡ تُقَطَّعَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَاَرۡجُلُہُمۡ مِّنۡ خِلَافٍ اَوۡ یُنۡفَوۡا مِنَ الۡاَرۡضِ ؕ  ذٰلِکَ لَہُمۡ خِزۡیٌ فِی الدُّنۡیَا وَلَہُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ۙ
অর্থঃ যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আর যমীনে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে বেড়ায় তাদের শাস্তি হল এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে অথবা তাদের হাত পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে, অথবা তাদেরকে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এ হল তাদের জন্য দুনিয়াতে লাঞ্ছনা, আর তাদের জন্য আখেরাতে রয়েছে মহাশাস্তি।
Indeed, the penalty for those who wage war against Allah and His Messenger and strive upon earth [to cause] corruption is none but that they be killed or crucified or that their hands and feet be cut off from opposite sides or that they be exiled from the land. That is for them a disgrace in this world; and for them in the Hereafter is a great punishment.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *