সহীহ বুখারী, পরিচ্ছেদঃ ৫৯৩. জুমু’আর (ফরয সালাতের) আগে ও পরে সালাত আদায় করা । হাদিস ৮৯০ এ উল্লেখ করা হয়েছে, `আবদুল্লাহ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুহরের পূর্বে দু’ রাকা’আত ও পরে দু’ রাকা’আত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু’ রাকা’আত এবং ইশার পর দু’ রাকা’আত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতেন। আর জুমু’আর দিন নিজের ঘরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন না। (ঘরে গিয়ে) দু’ রাকা’আত সালাত আদায় করতেন।’
সহীহ মুসলিম, পরিচ্ছেদঃ ৯. ইমামের খুতবাকালে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করা । হাদিস ১৮৯১, ১৮৯৩, ১৮৯৫,১৮৯৬, ১৮৯৭, ১৮৯৮। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি বললেন, জুমুআর দিনে তোমাদের কেউ যখন (মসজিদ) আসে আর তখন যদি ইমাম (হুজরা থেকে) বের হয়ে থাকেন, তবে সে দু’ রাকআত সালাত আদায় করে নেবে।
সহীহ মুসলিম, পরিচ্ছেদঃ ১১. জুমু’আর পরবর্তী (সুন্নাত) সালাত। হাদিস ১৯০৯ এ বলা হয়েছে, `ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ জুমুআর সালাত আদায় করলে তারপর চার রাকআত সালাত আদায় করবে।’
হাদিস ১৯১০ এ উল্লেখ করা হয়েছে, `আবূ বকর ইবনু আবূ শায়রা ও আমরুন নাকিদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা জুমু’আর পর সালাত আদায় করলে চার রাকআত আদায় করবে। আমর এর বর্ণনায় এ কথা অতিরিক্ত রয়েছে যে, ইবনু ইদ্রীস বলেন, সুহায়ল বলেছেন যে, যদি তোমার তাড়াহুড়ো থাকে তবে মসজিদে দু’রাকআত ও বাড়ীতে গিয়ে দু’রাকআত পড়ে নাও।’
হাদিস ১৯১১ এ উল্লেখ করা হয়েছে, `যুহায়র ইবনু হারব, আমরুন নাকিদ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে কেউ জুমুআর পর সালাত আদায় করতে চায় সে যেন চার রাকআত আদায় করে। তবে জারীর (রাঃ)-এর হাদীসে “তোমাদের মধ্যে” কথাটি নাই।’
হাদিস ১৯১২ এ উল্লেখ করা হয়েছে, `ইয়াহয়া ইবনু ইয়াহয়া, মুহাম্মদ ইবনু রুমহ ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) বর্ণিত যে, তিনি জুমুআর সালাত শেষে চলে যেতেন এবং ঘরে গিয়ে দু’ রাকআত পড়ে নিতেন। এরপর তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এরূপ করতেন।’
জুমআর খুতবার পূর্বে ‘কাবলাল জুমুআহ’ বলে কোন নির্দিষ্ট রাকআত সুন্নত নেই এবং জুমআর খুতবার পরে ‘বাদাল জুমুআহ’ বলে কোন নির্দিষ্ট রাকআত সুন্নত নেই। নামাযী মসজিদে এলে ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ ২ রাকআত সুন্নত পড়ে বসে যেতে পারে এবং দুআ, দরুদ তাসবীহ- যিকর বা তেলাওয়াত করতে পারে। আবার ইচ্ছা হলে নামাযও পড়তে পারে। তবে এ নামায হবে নফল এবং অনির্দিষ্ট সংখ্যায়।
মহানবী সাঃ বলেন, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন যথা নিয়মে গোসল করে, দাঁত পরিষ্কার করে, খোশবূ থাকলে তা ব্যবহার করে, তার সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরে, অতঃপর (মসজিদে) যায়, নামাযীদের ঘাড় ডিঙিয়ে (কাতার চিরে) আগে যায় না, অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী নামায পড়ে। তারপর ইমাম উপস্থিত হলে নীরব ও নিশ্চুপ থাকে এবং নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন কথা বলে না, সে ব্যক্তির এ কাজ এই জুমুআহ থেকে অপর জুমআর মধ্যবর্তীকালে কৃত পাপের কাফফারা হয়ে যায়।” (আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে মাজাহ্, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ৬০৬৬নং)
প্রকাশ থাকে যে, “প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায আছে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ৬৬২নং) এই হাদীস দ্বারা কাবলাল জুমআর সুন্নত প্রমাণ হয় না। কারণ, বিদিত যে, জুমআর আযান ও ইকামতের মাঝে থাকে খুতবা। আর মহানবী সাঃ-এর যুগে পূর্বের আর একটি আযান ছিল না। আর সুন্নত প্রমাণ হলেও মুআক্কাদাহ ও নির্দিষ্ট সংখ্যক নয়।
তদনুরুপ “এমন কোন ফরয নামায নেই, যার পূর্বে ২ রাকআত নামায নেই।” (ইবনে হিব্বান, সহীহ, ত্বাবারানীরানী, মু’জাম, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩২, জামে ৫৭৩০নং) এ হাদীস দ্বারাও জুমআর পূর্বে ২/৪ রাকআত সুন্নত প্রমাণ হয় না। কারণ, জুমআর ফরয নামাযের পূর্বে খুতবা হয়। আর খুতবার পূর্বে ২ রাকআত নামায এ দ্বারা প্রমাণিত হয় না। (সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ২৩২নং)
ইমামের খুতবা চলাকালে কেউ মসজিদে উপস্থিত হলে তাকে সেই অবস্থায় হাল্কা করে যে ২ রাকআত পড়তে হয়, তা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ নয়; বরং তা হল তাহিয়্যাতুল মাসজিদ।