ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান

মুফতী আকরাম হুসাইন মুনশি: বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিস্কার ইসলামের সহযোগী। ইচ্ছায়- অনিচ্ছায় এর দ্বারা ইসলামের বেশ উপকার হচ্ছে। ইসলামের পরিচয় তুলে ধরতে, শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। যারা যুক্তির দোহাই দিয়ে ইসলামের অনেক বিধি-বিধানকে অস্বীকার করতো, আজ আধুনিক বিজ্ঞান তাদের সেসব ভ্রান্তি ও বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করেছে । বিজ্ঞানের বেশ কিছু তথ্য-তত্ত্ব ও আবিস্কার তাদের অমূলক ও ভ্রান্ত ধারণা নির্মূল করেছে প্রচ- প্রতাপ ও দুর্দান্ত দাপটের সাথে। যে কারণে তাদের নিজেদের সামনেইনিজস্ব যুক্তির অসারতা প্রতিনিয়তপ্রকাশিত হতে চলছে।

যুগশ্রেষ্ঠ হাদীসবেত্তা, খাতামুল মুহাদ্দিসীন আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. বিজ্ঞানের নব আবিস্কারকে ইসলামের নিকটবর্তী বা সহযোগীবলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। দারুল উলূম (ওয়াক্বফ) দেওবন্দের মরহুম শায়খুল হাদীস আল্লামা আনযার শাহ কাশ্মিরী রহ. লিখেছেন, একবার আল্লামা কাশ্মিরী রহ.কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ইসলামের মাহাত্ম ও শ্রেষ্ঠত্বপ্রমাণেপ্রাচীন দর্শন বেশী সহায়ক নাকি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নব আবিস্কার? জবাবে তিনি বলেছিলেন, আধুনিক বিজ্ঞানের নিত্য-নতুন আবিস্কার ইসলাম বুঝতে ও বুঝাতে, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে বেশ সহায়ক হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। হ্যাঁ, বাস্তবতাও তাই। বিজ্ঞানের নতুন নতুন তথ্য-উপাত্ত আজ ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ম বুঝাতে যারপরনাই অবদান রাখছে। কয়েকটি উপমার মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে।

এক. প্রাচীনকালে বিশ্বনবীর মেরাজে গমনের ঘটনাকে বুঝাতে কত বেগ পেতে হতো। কত শত উদাহরণ দিয়ে মানুষকে বুঝাতে হতো। তথাপি মানুষ প্রশ্ন তুলতো, স্বল্প সময়ে এত দীর্ঘ-সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসমানে- আরশে পৌছা কিভাবে সম্ভব। আর আজ?মূহুর্তেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কত দ্রুতগতিতে যাওয়া যায়। বিজ্ঞানের দ্রুতগতি সম্পন্ন উড়োজাহাজ-রকেট আমাদেরকে মেরাজের ঘটনা বুঝতে বেশ সহযোগিতা করছে।

দুই. কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে জানা যায়, মানুষের আমল পরিমাপ করা হবে। বিষয়টি অনুধাবন করা আমাদের জন্য দুরূহ ব্যপার ছিল। প্রশ্ন জাগতো, আমলের শরীর নেই তেমনি তা গড়ন-গঠন বিশিষ্ট কোন বস্তুও নয়, তথাপি তা কিভাবে পরিমাপ করা হবে? প্রযুক্তির তৈরী থার্মোমিটার সে প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। এখন খুব সহজে-অনায়াসেই মানুষের উষ্ণতা ও শীতলতার পরিমাপ করা যায়। এটা অস্বীকারকারী কোন মানুষ এখন পাওয়া বড় মুশকিল।

তিন. মানুষের কথার হিসাব দিতে হবে। এগুলো আল্লাহর সামনে পেশ করা হবে। আজ টেপ রেকর্ডার, অডিও-ভিডিও রেকর্ডারের প্রতি লক্ষ করলেই আপনি জবাব পেয়ে যাবেন। (নক্বশে দাওয়াম। পৃষ্ঠা- ১১৭-১১৮)

চার. কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে, জান্নাতী ও জাহান্নামীরা পরস্পরকে দেখবে, চিনবে ও কথা বলবে। প্রশ্ন জাগে, জান্নাত- জাহান্নামের মাঝে এত বিশাল দূরত্ব, তবে দেখা, চেনা ও কথা বলা কি করে সম্ভব? বিজ্ঞান আমাদেরকে এর উত্তর দিয়েছে। আজকের মোবাইল, টেলিগ্রাফ, রেডিও, ইমু ইত্যাদি নিত্য-নতুন আবিস্কৃত প্রযুক্তির দিকে তাকালে সচেতন মাত্রই স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে, দূর থেকেও কাউকে দেখা যায়, তার সাথে কথা বলা যায়। ভাব-বিনিময় করা যায়। (সূরা মুদ্দাসসির: আয়াত- ৪০-৪১)

পাঁচ. কিয়ামতের দিন বান্দাকে আমলনামা দেয়া হবে। যেখানে তার কৃত ভাল-মন্দ সবকিছু ফুটে উঠবে। এক সময় মানুষ ভাবতো, জীবনে যা কিছু করছি, তার সবকিছু ধারণ করে রাখা সম্ভব? নিজেদের মুখের শব্দ- আওয়াজ ও কাজ-কর্ম আল্লাহ কিভাবে একত্র করে রাখবেন? আজ কিন্তু কোন সচেতন মানুষ এ প্রশ্ন করবে না। করার সুযোগও নেই। আজকের ছোট্ট একটি মেমোরি কার্ডে হাজার হাজার ঘটনা শব্দ ও কর্ম ধারণ করে রাখা একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। (সূরা আল হাক্কাহ: আয়াত- ১৯-২৫), মালফূযাতে কাশ্মিরী: পৃষ্ঠা- ৯৪-৯৫)
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. বলতেন, নিত্য-নতুন তথ্য-উপাত্ত ও বস্তু আবিস্কৃত হচ্ছে, এর দ্বারা অনেক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয়াদী মানুষের সামনে প্রকাশিত হতে চলছে। আল্লাহর মেহেরবানী, তিনি বেঈমানদের দ্বারা নতুন নতুন বিষয় আবিস্কার করিয়ে শ্বাশত ধর্ম ইসলামকে অনেক শক্তিশালী করছেন। আধুনিক বিজ্ঞানের নিত্য- নতুন আবিস্কার আজ অনেক অস্পষ্ট বিষয়কে স্পষ্ট করতে চলছে। এক সময় মানুষ ধারণা করতো, হাশরের দিন ভূ-পৃষ্ঠ কিভাবে তার উপর ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলে দিবে?জমীন কিভাবে কথা বলবে? এটা তো জড়বস্তু। এর তো জান-প্রাণ কিছুই নেই। কিন্তু আজ? কলেরগান, রেডিও, ইন্টারনেট ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ব্যপক উপস্থিতি ও ব্যবহার এসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য যথেষ্ট। কিছু লোহা, তামা, তারযুক্ত, কখনো তারবিহীন যন্ত্র¿ এখন মানুষের মত কথা বলে। (খুতুবাতে হাকীমুল উম্মাত: খন্ড: ৭, পৃষ্ঠা: ১৭৫-১৭৬)

সহীহ বুখারীতে বর্ণিত আছে। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা কি মনে কর যে, আমার কিবলা শুধুমাত্র এ দিকে? আল্লাহর শপথ! তোমাদের রুকু, তোমাদের খুশু কোন কিছুই আমার কাছে গোপন থাকে না। নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের দেখি, আমার পিছন দিক থেকেও। (হাদীস নং- ৭০৫, ইফাবা)

আলোচ্য হাদীসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ফুটে উঠেছে। রাসূল সা. নিজের পেছন থেকেও দেখেন। বিষয়টি যুক্তিবাদীদের নিকট অসম্ভব মনে হয়েছিল। তারা এটাকে অস্বীকার করতো। অথচ বাস্তবে এমনটি হওয়া অসম্ভব নয়। হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ. আয়নার মধ্যে মানুষের প্রতিকৃতি দেখার চমৎকার মর্ম উল্লেখ করে লিখেছেন। আয়নায় কারো আকৃতি দেখার জন্য শর্ত হল, তার চোখ খোলা থাকা। মানুষের চোখের রশ্মি আয়নায় পড়লে সেখান থেকে দর্শনকারীর দিকে কিরণ প্রত্যাবর্তন করে। চোখ না খুললে রশ্মিও দেখা যায় না, আয়নার মধ্যে তাকেও সে দেখতে পায় না। আর আয়নার মধ্যে যা দেখা যায়, তা ভিন্ন কোন বস্তু নয়। বরং নিজ রশ্মিই নিজের দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়। এর দ্বারা জানা যায়, দেখার জন্য চোখের রশ্মি ইল্লত বা কারণ। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি চোখের রশ্মি ঘুরিয়ে পেছন দিক নিতে পারে, সে পেছন দিক থেকেও দেখতে সক্ষম হবে। রাসূল সা. নিজের পেছনের কার্যক্রম কিভাবে দেখতেন, সে বিষয়ে ওলামাদের তিনটি মত পাওয়া যায়।

১. কতক আলেম বলেছেন, তাঁর মাথায় দুটি ছিদ্র ছিল, যার মাধ্যমে পেছনের বস্তু দেখতেন। ২. কতক আলেমের মতে, আল্লাহ তায়ালা রাসূল সা.কে এক বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছিলেন, তিনি চোখের রশ্মি ঘুরাতে পারতেন। যখন সামনে দেখার মনস্থ করতেন, তখন চোখের রশ্মি ঘুরিয়ে নিতেন। এ ক্ষমতা সবার নেই। তাই কেউ ইচ্ছা করলেই এমনটি করতে সক্ষম হবে না। (মালফুজাতে হাকীমুল উম্মত। খ-: ১২, পৃষ্ঠা- ১৯৮-১৯৯)

৩. আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. বলতেন, পেছনের বস্তু দেখতে পারা; এটা রাসূল সা. এর মুজিযা ছিল। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহ. থেকেও এমন মতই পাওয়া যায়। হ্যাঁ, আজকের বিজ্ঞানও বলছে, এমনটি হতে পারে। বিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে দর্শনশক্তি বিদ্যমান আছে। (মালফূজাতে মুহাদ্দিসে কাশ্মিরী; পৃষ্ঠা- ৩৪২-৩৪৩) সামনে এর উদাহরণ আসছে।

কুরআনুল কারীমের সূরা ফুরকানের ৩৪ নং আয়াতে হাশরের ময়দানে কাফেরদেরকে উঠানো সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে- ‘যাদেরকে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা অবস্থায় জাহান্নামের দিকে একত্রিত করা হবে, তাদেরই স্থান হবে নিকৃষ্ট এবং তারাই পথভ্রষ্ট।” আলোচ্য আয়াতটি যুক্তিবাদীদের মানতে কষ্ট হয়। তারা বলতে চায়, মানুষ মুখ বা চেহারা দিয়ে কিভাবে হাটবে-চলবে? তেমনি কিয়ামতের দিন মানুষের মুখ বন্ধ থাকবে; আর হাত-পা কথা বলবে, এটা কী করে সম্ভব? এমনটি হতে পারে না। ওদের এসব অমূলক দাবীর জবাবে আল্লামা কাশ্মিরী রহ. বলেন, যেসব যুক্তিবাদীরা আজও আল্লাহর কুদরতী কারিশমা মানতে পারছে না। নিদর্শন মানতে চাচ্ছে না। মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিভাবে কথা বলবে, তা নিয়ে শঙ্কা-আশঙ্কা প্রকাশ করছে, তাদের একটু গভীরভাবে ভাবা দরকার। আজকের যুগেই তো তাদের প্রশ্নের জবাব বিদ্যমান। বিজ্ঞান ইতোমধ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে যে, চোখ ব্যতিত শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মাঝেও দেখার শক্তি- দর্শনশক্তি বিদ্যমান। সেদিন বেশী দূরে নয়, যেদিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আরো নিত্য-নতুন আবিস্কারের মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হবে, যে কোন অঙ্গ কথা বলতে সক্ষম।’ (ফয়জুল বারী: তাফসীর অধ্যায়। সূরা ফুরকান)

ঘটনাটি ২০০৭ সালের। ক্রীগ ল্যান্ডবার্গ। একজন বৃটিশ সৈনিকের নাম। বয়স মাত্র ১৯ বছর বছর। ইরাকে নিজ দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় গ্রেনেডের আঘাতে তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়। সে এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুখের মাধ্যমে দেখে। তার মুখ আজ চোখের কাজ দিচ্ছে। আজ থেকে ১০ বছর পূর্বে এ খবরটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। দেশী-বিদেশী পত্র- পত্রিকায় বিশেষ শিরোনাম ছিল এটি। ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর রবিবার দৈনিক জঙ্গ পত্রিকা খবরটি এভাবে ছেপেছিল- মুখের সাহায্যে দৃষ্টিশক্তির প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন বৃটিশসৈনিক! (তার সম্পর্কে জানতে এই লিঙ্কে দেখতে পারেন::https://www.liverpoolecho.co.uk/news/liverpool-news/heroic-liverpool-soldier-blinded-iraq-11580305) মূলত ব্রেইন পোর্ট ভিশন ডিভাইস (brain port vision device) নামক একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ আজব কাজটি করা যায়।

আমেরিকান একটি কোম্পানী এটি তৈরী ও বাজারজাত করছে। আমাদের কথা চলছিল, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান সম্পর্কে। মহান আল্লাহ যে কোন অঙ্গ দিয়ে যে কোন কাজ নিতে পারেন। কিয়ামতের দিন হাত-পায়ের দ্বারা কথা বলার কাজ নিবেন। জাহান্নামীরা চেহারায় ভর করে উপুড় হয়ে হেটে জাহান্নামে যাবে, কোনটাই অসম্ভব নয়। আজকের বিজ্ঞান এমন অনেক অস্পষ্টতা দূর করছে এবং কিয়ামতের আগে অনেক কিছু আরো স্পষ্ট ইনশাআল্লাহ।

হাদীসটি সহীহ বুখারীর। হযরত উম্মে খালিদ রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা. এর নিকট কিছু কাপড় আনা হয়। তার মধ্যে একটি নকশাযুক্ত কাল চাদর ছিল। তিনি বললেন, আমি এ চাদরটি কাকে পরিধান করাব, এ ব্যপারে তোমাদের অভিমত কি? সবাই নীরব থাকল। তিনি বললেন, উম্মে খালিদকে আমার কাছে নিয়ে এসো। নিদের্শমোতাবেক তাঁকে নবী সা. এর কাছে আনা হলো। বিশ্বনবী স্বহস্তে তাঁকে ঐ চাদর পরিয়ে দিয়ে বললেন- পুরাতন কর ও দীর্ঘদিন ব্যবহার কর। তিনি চাদরের নকশার দিকে তাকাতে লাগলেন এবং হাতের দ্বারা আমাকে ইঙ্গিত করে বলতে থাকলেন, হে উম্মে খালিদ! এটাসানা, হে উম্মে খালিদ! এটা সানা। হাবশী ভাষায় ‘সানা’ অর্থ সুন্দর। ইসহাক রহ. বলেন, আমার পরিবারের জনৈক মহিলা আমাকে বলেছে, সে উক্ত চাদর উম্মে খালেদের পরিধানে দেখেছে। (সহীহ বুখারী। হাদীস নং- ৫৪২৭, পোষাক অধ্যায়।) ইমাম বুখারী রহ. বলেছেন, কোন মহিলা সাহাবী উম্মে খালেদের মত এত দীর্ঘ হায়াত পায়নি।

এই হাদীসের বিভিন্ন সূত্রে একথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল সা. এর দোয়ার বরকতে উম্মে খালিদ রাযি. দীর্ঘ হায়াত লাভ করেছিলেন। তার এ দীর্ঘ হায়াতের পরম সৌভাগ্যের কথা লোকমুখে ব্যপকভাবে চর্চা হতো। রাসূল সা. প্রদত্ত তার কাপড়টিও দীর্ঘদিন পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য ছিল। এই হাদীসের ভিত্তিতে আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ. বলেছেন, বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হয়েছে, যুগ শেষে নতুন যুগের আগমন ঘটেছে কিন্তু সে কাপড়টি ছিড়েনি, ফাটেনি, পুরাতন হয়নি। সুতরাং এমনটি নিশ্চিত ধারণা করা যায়, কাপড়টি উম্মে খালেদের গড়ন-গঠনের পরিবর্তনের সাথে সাথে অটোমেটিক ছোট-বড় হত। কারণ, রাসূল সা. যখন উম্মে খালেদকে কাপড়টি দিয়েছিলেন তখন তিনি ছোট্ট ছিলেন। দিনদিন তিনিও বড় হয়েছেন, কাপড়টিও বড় হয়ে তার শরীরের আকৃতি অনুযায়ী হয়েছে। (ফয়জুল বারী ফি শরহিল বুখারী; জিহাদ অধ্যায়)

পাঠক, এই তো কয়েকমাস পূর্বে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন আবিস্কার উক্ত হাদীস থেকে অর্জিত ধারণাটি সত্য বলে প্রমাণিত করেছে। শিশুর সাথে সাথে শিশুর পোষাক বড় হবে, এমন পোষাক বিজ্ঞান ইতোমধ্যে আমাদেরকে উপহার দিয়েছে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঝঙ্গ পত্রিকায় এ সংবাদটি এভাবে লিখেছেঃ-

পিতামাতা শিশুদের পোষাক পরিচ্ছদের ব্যপারে সর্বদা চিন্তায় থাকে। এর দ্বারা একদিকে সময় নষ্ট হয় অন্যদিকে বারবার দামী পোষাক কিনতে প্রচুর অর্থের অপচয় হয়। শিশুদের পোষাক দ’ুবার ব্যবহারের পর আর পরিধান করা যায় না; কারণ ওরা খুব দ্রুতগতিতে বড় হতে থাকে। কিন্তু এখন (চবঃরঃ চষর) পেটিট পেলি নামক এক ধরণের পোষাক আবিস্কৃত হয়েছে। ওমর ফারুক নামক একটি কোম্পানী এমন স্মার্ট পোষাক তৈরী করেছে, যেটি একবার কিনলে দু’বছর পর্যন্ত অন্য পোষাক কেনার প্রয়োজন নেই। বিজ্ঞরা বলেন, জন্মের পর থেকে ২ বছর পর্যন্ত অন্তত ৭বার একটি শিশুর আকৃতি পরিবর্তন হয়। এজন্য দু’বছরে তার জন্য ৭বার পোষাক কিনতে হয়। আধুনিক প্রযুক্তির তৈরী নতুন এ পোষাকগুলো ৪ মাস থেকে ৩৬ মাস পর্যন্ত শিশুর শরীরের সাথে ফিট হয়।

কোম্পানীর মহাপরিচালক মি. রাইয়্যান মেরি ইয়াসিন বলেন, শিশুদের জন্যবারবার নতুন নতুন পোষাক ক্রয় করতে প্রচুর অর্থ অপব্যয় হয়। আমাদের প্রস্তুতকৃত পোষাক কয়েকটি গুণগত মানসমৃদ্ধ। এগুলো ওয়াটার প্রুব ও বাতাস প্রুব। এতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে। পোষাকগুলো হালকা ও মসৃন অনুভূত হয়। বেশ মজবুত ও টেকসই। বারবার ধোয়ার দ্বারা কোন ক্ষতি হয় না। কোম্পানীকে সে দেশের সরকার এমন উপকারী পোষাক তৈরীর জন্য পুরস্কারে ভূষিত করেছে। (দৈনিক ঝঙ্গ; ২২ জিলহজ্ব ১৪৩৮ হি. মোতাবেক ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ইং) বিজ্ঞান এখন শিশুদের পোষাক তৈরী করেছে। হয়তো কিছুদিন পর প্রযুক্তি আরেকটু উৎকর্ষতায় পৌছবে। তখন বড়দের পোষাকও তৈরী করতে সক্ষম হবে।

পরিশেষে বলা যায়, বিজ্ঞানের যত অগ্রগতি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের নিকট বিশেষত যুক্তিবাদীদের ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করা তত সহজ হতে চলছে। যার ছোয়া এখন উন্নত বিশ্বে আঁচ করা যাচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সত্যান্বেষী বিধর্মীরা দিন দিন প্রতিদিন ইসলামে দীক্ষিত হচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ। (সূত্র. মাহনামা দারুল উলূম দেওবন্দ; ফেব্রুয়ারী-২০১৮)

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *